সোনারগাঁয়ের সোনার মেয়ে

 

সোনারগাঁয়ের সোনার মেয়ে - শিক্ষামূলক ঘটনা 

সোনারগাঁয়ের ঈসা খাঁর নাম কে না জানেতিনি ছিলেন বীর যোদ্ধা বহু যুদ্ধে তিনি মোগল সৈন্যদের হারিয়ে দিয়েছিলেন সোনারগাঁ ছিল ঈসা খার রাজধানী সেই ঈসা খাঁ তখন আর বেঁচে নেই তাঁর পুত্র মুসা খা পরগনার শাসক হয়েছেন তবে তাঁর বয়স ছিল খুবই কম তাই দেশ শাসনের দায়িত্ব পালন করছিলেন ঈসা খাঁর স্ত্রী বেগম নিয়ামত ঈসা খাঁর দুশমনের কোনো অভাব ছিল না তারা ভেবে দেখলএই তো সুযোগসোনারগা দখল করার এখনই সময় ত্রিপুরার রাজাআরাকানের রাজাবিক্রমপুরের রাজা সবাই মিলে বিরাট সৈন্যদল তৈরি করলেন ঈসা খাঁর সঙ্গে লড়াই করে এঁরা কখনও জিততে পারেননি বরং বারবার হেরে গেছেন সকলে মিলে এবার সেই পরাজয়ের বদলা নেবেন

সোনারগাঁয়ের চারদিকে সাজসাজ রব দুশমনদের মতলব আর অজানা নেই বেগম নিয়ামত তাঁর সেনাপতিদের ডাকলেন বললেন, 'দুশমনরা আমাদের দেশ দখল করার জন্য আসছে আজ ঈসা খা নেই তবে আপনারা বেঁচে আছেন আমরা বীরের জাত মোগল-পাঠান কেউ- আমাদের হারাতে পারেনি দুশমনরা আমাদের কাছে হার মানবেই আপনারা তৈরি হোন লড়াইয়ে আমাদেরই জয় হবে বেগমের একথায় সেনাপতিরা খুব সাহস পেলেন তাদের শরীরে রক্ত নেচে উঠল তারা নতুন উৎসাহে লড়াইয়ের আয়োজন করতে লাগলেন

শীতলক্ষ্যা আর ধলেশ্বরী নদী যেখানে মিলেছে সেখানে ত্রিবেণীর দুর্গ বেগম নিয়ামত নিজে দুর্গ রক্ষার ভার নিলেন ত্রিবেণীর দুর্গে সৈন্য সমাবেশ করা হলো গোলাবারুদ এনে জমা রাখা হলো বসানো হলো অনেকগুলো কামান।।

দুশমনরা নদীপথে অনেকগুলো জাহাজে করে সোনারগাঁয়ে এসে পৌছল সোনারগাঁয়ের সৈনিকরাও জাহাজ নিয়ে এগিয়ে গেল শুরু হলো ভয়ানক লড়াই গোলাগুলির আওয়াজে ধলেশ্বরীর বুক কেঁপে কেঁপে উঠল।। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সোনারগাঁয়ের সৈনিকরা হেরে গেল তাদের বিপক্ষে তিন-চারজন হাজার সৈন্য তারা আর কতক্ষণ লড়াই করবেত্রিবেণীর দুর্গ থেকে অবিরাম ছুটে চলছে কামানের গোলা বেগম নিয়ামত দুর্গের চূড়ায় বসে আছেন তিনি সৈন্যদের উৎসাহ দিয়ে চলেছেন কিন্তু দুর্গ বুঝি আর রক্ষা করা গেল না বেগম তাঁর সৈনিকদের আদেশ দিলেনতোমরা দুর্গ ছেড়ে বেরিয়ে পড়ো সৈন্যরা তখন দুর্গ ছেড়ে বেরিয়ে গেল বেগম নিজে দুর্গের মধ্যে রয়ে গেলেন কী অসীম সাহস!

পরাজয়ের অপমান মেনে নেব না, বীরের মতো লড়াই করে দরকার হলে মরণকে বরণ করবএই ছিল তাঁর শপথ বেগম নিয়ামত একা একা কামান দেগে চললেন এরই ফাঁকে দুর্গের সব গোলাবারুদখাবারদাবার  রসদপত্র পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হলো সৈন্যরা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতরে চলে গেল নিরাপদ জায়গায় ত্রিবেণী দুর্গ এখন দুশমনদের হাতে বিজয়ের আনন্দে সৈন্যরা মাতোয়ারা হৈহৈ করতে করতে তারা দুর্গের মধ্যে ঢুকে পড়ল

কিন্তু একিকোথাও কেউ নেইহাতিয়ারপত্র সব উধাও পরে আছে শূন্য দুর্গ তাহলে এতক্ষণ তাদের উপর কামানের গোলা ছুড়ল কেসৈন্যরা এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগল হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন বিক্রমপুরের রাজা কেদার রায় তিনি এগিয়ে দেখলেনদূরে কামানের গায়ে হেলান দিয়ে একজন সৈনিক পড়ে আছে তার সারা শরীর রক্তে লাল যেন ফুটে আছে থোকা থোকা লাল গোলাপ তাঁর মাথায় লোহার টুপিগায়ে লোহার বর্ম তাঁর টুপি খুলে ফেলতেই একরাশ দিঘল কালো চুল বেরিয়ে পড়ল সৈন্যরা দেখতে পেলএকজন বীর নারী শহীদ হয়ে চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে আছেন

কেদার রায় বললেনদেখ তোতোমরা কেউ একে চিনতে পারো কি নাকেদার রায়ের সৈন্যদলের একজন সৈন্য আগে ঈসা খার বাহিনীতে চাকরি করত সে এগিয়ে এসে বললহুজুরআমি চিনতে পেরেছি ইনি ঈসা খাঁর বিধবা স্ত্রী বেগম নিয়ামত

একথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল বেগম নিয়ামত ঈসা খাঁর যোগ্য পত্নী বীরের মতো লড়াই করে প্রাণ দিয়েছেন জন্মভূমির মাটি ও মানুষদেরকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে রক্ষা করার জন্যে শেষ নিঃশ্বাসের আগ পর্যন্ত লড়ে গেছেন।



Post a Comment

0 Comments